কাজী সাঈদ ॥ আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্ব আমির হোসেন আমুর ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত ঝালকাঠি-২ (নলছিটি-ঝালকাঠি) সদর আসনে দলীয় ও সামাজিক নানা কর্মকান্ডের কারনে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সর্বজনপ্রিয় মিল্লাত হোসেন। এ আসনের হেভিওয়েট এই নেতার পাশাপাশি ক্রমেই আলোচিত হচ্ছেন মিল্লাত হোসেনের নাম। মিল্লাত হোসেনের জনপ্রিয়তায় ঈর্শান্বিত হয়ে সম্প্রতি তার (মিল্লাত) বাবা-মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে অনুষ্ঠান পন্ড করে দেয়ার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে আমু অনুসারীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এমন ঘটনায় মিল্লাতের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আ’লীগ নেতাকর্মীরা। তবে বর্ষীয়ান নেতা শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্ব আমির হোসেন আমুর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মিল্লাত হোসেন বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দল। আমি বৃহত্তর এই দলের একজন ছোট নেতা, দলীয় মনোনয়ন আমি চাইতেই পারি। পাব কিনা সেটা কেন্দ্রের ব্যাপার। তাছাড়া শিল্পমন্ত্রী আমার মুরুব্বী, তাঁর বয়স হয়েছে। তাই এমনও তো হতে পারে তিনিই আমাকে প্রার্থী করতে পারেন। সর্বপরী দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই আমি কাজ করবো, এখানে বিভেদের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে দেশের সব নির্বাচনী এলাকায়। প্রতিনিয়ত স্ব স্ব এলাকায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য সব প্রার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে নেই বরিশালের ঝালকাঠী-০২ সদর আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে আনেক আগে থেকেই এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মিল্লাত হোসেন। ঝালকাঠী-০২ সদর আসনে বিগত দিনে একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন বাংলাদেশ আ’লীগের বর্ষীয়ান নেতা আলহাজ্ব আমির হোসেন আমু। তিনি বর্তমান সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। দীর্ঘদিন শিল্প মন্ত্রনালয়ের দ্বায়িত্বে থেকে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বেশ উন্নয়নও করেছেন। কিন্তু তিনি দলের প্রবীন নেতা হওয়ায় সাধারন নেতাকর্মীরা সহসাই তাঁর কাছে যেতে সাহস পাচ্ছেন না। তাই মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এবার স্বপ্ন দেখছেন যুবলীগ নেতা মিল্লাত হোসেনকে নিয়ে। এ সুযোগটি মিল্লাত হোসেনও হাতছাড়া না করে কাজে লাগাতে চাইছেন। তাই বেশ কয়েক বছর ধরে নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে এলাকার উন্নয়নমমূলক কর্মকান্ডের পাশাপাশি নানা সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেতে আত্মনিয়োগ করেন সর্বজনপ্রিয় এই যুবলীগ নেতা মিল্লাত হোসেন। তবে তিনি আসন্ন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন তা এতদিন প্রকাশ পায়নি। তার মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পায় গত ঈদ-উল আযহার সময় এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার ছেড়ে দেয়ার পর। এরপর দলীয় নেতাকর্মীরা দল বেঁধে ছুটতে থাকে মিল্লাতের কাছে। নেতাকর্মীদের ভালবাসার টানে এলাকায়ও যাতায়াত বেড়ে যায় মিল্লাতের।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সাধারন সম্পাদক মিল্লাত হোসেন তার পিতা মরহুম এডভোকেট মোশারফ হোসেন ও মাতা হোসনে আরা বেগমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনায় নলছিটি উপজেলার নিজ বাড়ী সংলগ্ন কুলকাঠি ইউনিয়নের পাওতা বাজার জামে মসজিদ ও মাদ্রাসায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন মিল্লাত হোসেন। এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানানো হয় ঝালকাঠী সদর আসনের সর্বস্তরের দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। এমন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বেঁকে বসেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর কতিপয় সুবিধাভোগী অনুসারী ও মন্ত্রি নিয়ন্ত্রিত পুলিশ প্রশাসন। অনুষ্ঠান পন্ড করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তারা। পথে পথে দেয়া হয় বাঁধা। সৃষ্টি করা হয় প্রতিবন্ধকতা। এমনকি অনুষ্ঠানস্থলে আসা নেতাকর্মীদের মটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন আটক করতে চেকপোস্ট বসায় নলছিটি থানা পুলিশ। মটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন আটক করে হয়রানী করা হয় তাদের। অনুষ্ঠানস্থলে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারন মুসল্লীদের যেতে বাঁধার সৃষ্টি করেন তারা। যা নলছিটি উপজেলায় এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা এই প্রথম বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানায়, নলছিটি থানা পুলিশ চেকপোস্ট বসানো স্থানটা এই এলাকার অত্যান্ত প্রত্যন্ত অঞ্চল। পুলিশের এমন কর্মকান্ডে নলছিটিতে আ’লীগের কোন উপকার হয়নি বরং ব্যাপকভাবে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন দলের প্রবীন নেতা শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। নাম না প্রকাশের শর্তে নলছিটি আ’লীগের প্রবীন এক নেতা জানান, পুলিশ প্রশাসনের নগ্ন আচরনে আমাদের মনে হয়েছে মিল্লাত হোসেন আ’লীগের কেউ নয়, জামায়াতের কোন নেতা। আমি এহেন কতিপয় সুবিধাভোগী আ’লীগ নেতাকর্মী ও পুলিশী আচরনের নিন্দা জানাই। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, অবশ্যই মন্ত্রী মহোদয় বিষয়টি জেনেছেন এবং তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন। তিনি আরও বলেন, দলের মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারেন। তাই বলে যে চাইবেন সেই মনোনয়ন পাবেন এমন তো নয়।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি নলছিটি) সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ মিল্লাত হোসেন এর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না হলেও প্রচার প্রচারণা ব্যাপক হওয়াতে কিছু অতিউৎসাহী ব্যক্তি এ ধরনের কর্মকান্ড ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ মিল্লাত হোসেন। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চেয়েছি। মনোনয়ন দেয়া না দেয়া মাননীয় প্রধামন্ত্রীর ইখতিয়ার। দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পথ চলবো, কারো পথের কাঁটা হয়ে নয়। সহযোগী হিসেবে পাশে থাকার চেষ্টা করব। এলাকার দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারন মানুষের পাশে অতীতে ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও পাশে থেকে এলাকাবাসী ও দলের স্বার্থে কাজ করে যাবো বলে মনোনয়নপ্রত্যাশী মিল্লাত হোসেন জানান।
Leave a Reply